মাহে রমজান ও দাওয়াতী কাজ৷

রমজান মাস কুরআন নাজিলের মাস। রমজান মাস কুরআন বিজয়েরও মাস। ২য় হিজরীর ১৭ রমজান বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেই যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সা.-এর নেতৃত্বে ৩১৩ জন মর্দে মুজাহিদ সাহাবায়ে কেরাম রেদওয়ানুল্লাহি তায়ালা আজমাইন এক হাজারের অধিক কাফির বাহিনীকে পরাজিত করে দীনের ঝান্ডাকে বুলন্দ করেন। ৮ম হিজরীতে দশ হাজারের অধিক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সা.-এর নেতৃত্বে মক্কা অভিযান পরিচালনা করে বিনা যুদ্ধে মক্কা বিজয় করেন। তাই এই পবিত্র রমজান মাসে কুরআনকে বিজয়ী করার স্বপ্ন নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ব্যাপকভাবে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর অন্তর্ভুক্ত কাজ নিষ্ঠার সাথে পরিচালনা করতে হবে। বদর ও মক্কা বিজয় থেকে আমরা সেটাই উপলব্ধি করতে পারি।
১. রমজানে দাওয়াতী কাজ
ইসলাম প্রচার ও প্রসারের মূল মাধ্যমই হচ্ছে দাওয়াত ইলাল্লাহর কাজ। দাওয়াতের জন্য কথা বলাকে মহান আল্লাহ সবচাইতে উত্তম কথা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সেই ব্যক্তির কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হবে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, সৎকাজ করলো এবং ঘোষণা করলো আমি মুসলমান। (সূরা হামীম আস সাজদা : ৩৩)।
সকল নবী-রাসূলের মিশন ছিল দাওয়াত। শেষ নবী মুহাম্মদ সা.-কে মহান আল্লাহ তায়ালা দা’য়ী ইলাল্লাহ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।
হে নবী! আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী বানিয়ে, সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে। আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী এবং উজ্জ্বল প্রদীপ হিসেবে। (সূরা আহযাব : ৪৫-৪৬)।
ছয় প্রকার ব্যক্তিকে দাওয়াত দেয়া দরকার। ১. নিজেকে, ২. পরিবার, ৩. প্রতিবেশী, ৪. আত্মীয়স্বজন, ৫. বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত এবং ৬. বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সাহেবে নিসাব।
বর্তমান সময়ে দাওয়াতী কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার সুবিধাজনক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, টেলিগ্রাম ইত্যাদি ব্যবহার করে মানুষের কাছে দাওয়াত পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে। করোনার সময়ে সরাসরি সাক্ষাতের সুযোগ না পেলেও অনলাইনে দাওয়াতী কাজ অব্যাহত রাখতে হবে।
২. কোথা থেকে দাওয়াতী কাজ শুরু করতে হবে?
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের এবং নিজেদের পরিবার ও পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো; মানুষ এবং পাথর হবে যার জ্বালানি। (সূরা তাহরীম : ৬)।
এমন জায়গা থেকে দাওয়াতী কাজ শুরু করতে হবে, যেখানে সফলতা পাওয়া সহজ। আর সেটা হলো দা’য়ীকে প্রথমে তাঁর নিজের সত্তার পেছনে কাজ করতে হবে। দা’য়ী নিজের সত্তাকে কুপ্রবৃত্তি থেকে মুক্ত করতে না পারলে অন্যত্র দাওয়াত ফলপ্রসূ হতে পারে না। নিজের জীবনে যতসব কর্মীয় বৈসাদৃশ্য আছে, সেগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হওয়ার আন্তরিক প্রয়াসী হতে হবে। এ ব্যাপারে মুহাম্মদ সা. হলেন আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। আল্লাহর রাসূল এমন কোনো কথা বলেননি, যা তিনি নিজে আগে করে দেখাননি। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল, যা নিজেরা করো না? আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ যে, তোমরা এমন কথা বলো, যা করো না। (সূরা সফ : ২-৩)।
দাওয়াতের দ্বিতীয় ক্ষেত্র হলো নিজ পরিবার। দা’য়ীকে তার দাওয়াতের প্রভাব দিয়ে নিজ পরিবার গঠন করতে হবে। বাইরে গিয়ে মানুষকে সুন্দর সুন্দর কথা শোনাবো আর নিজ ঘরে ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী-পরিজন, ভাই-বোনদের কুরআন শেখাবো না, তা হতে পারে না। ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র সত্য দীন এবং এই দীন ছাড়া অন্য কোনো আদর্শের পেছনে ছোটা যাবে নাÑ এটা অবশ্যই বোঝাতে হবে। পরিবারে যারা দাওয়াতী কাজ করবে না, আখিরাতে তারা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শামিল হবে। ইসলামে পুরোপুরি দাখিল হতে হবে, শয়তানের পদাঙ্ক একটুও অনুসরণ করা চলবে না। কেননা সে আমাদের প্রকাশ্য দুশমন। ইসলাম এসেছে বিজয়ী হওয়ার জন্য অর্থাৎ ইসলাম অনুযায়ী পৃথিবীতে চলবে এবং এই ইসলামকে বিজয়ী করার সংগ্রামে প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর অংশগ্রহণ করা ফরজ। এজন্য সংঘবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করতে হবে। পরিবারের সদস্যদের জন্য দীনের তালিম দেয়া একজন দা’য়ীর জন্য অবশ্যই কর্তব্য। এটা তার পরিবারের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ।
৩. আত্মীয়তা ও সামাজিকতা রক্ষা করা
আত্মীয়তা ও সামাজিকতা রক্ষার ব্যাপারে ইসলাম দারুণভাবে উদ্বুদ্ধ ও সতর্ক করেছে। রমজান মাস এবং ঈদকে কেন্দ্র করে আত্মীয়তা ও সামাজিকতা রক্ষার দারুণ সুযোগ তৈরি হয়। আসুন, এ ব্যাপারে ইসলামের তাগিদ লক্ষ করি।
আত্মীয়কে তার অধিকার দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও তাদের অধিকার দাও। অপব্যয় করো না। যারা অপব্যয় করে, তারা শয়তানের ভাই আর শয়তান তার রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ। যদি তাদের থেকে তোমাকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হয় এজন্য যে, এখনো তুমি প্রত্যাশিত রহমতের সন্ধান করে ফিরছো, তাহলে তাদেরকে নরম জবাব দাও। (বনী ইসরাঈল : ২৬-২৮)।
স্মরণ করো যখন ইসরাঈল সন্তানদের থেকে আমরা এই মর্মে পাকাপোক্ত অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, আল্লাহ ছাড়া আর কারোর ইবাদত করবে না। মা-বাপ, আত্মীয়-পরিজন, এতিম ও মিসকিনদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। লোকদের ভালো কথা বলবে, সালাত কায়েম করবে ও জাকাত দেবে। কিন্তু সামান্য কয়েকজন ছাড়া তোমরা সবাই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছিলে এবং এখনো ভেঙে চলছো। (সূরা বাকারা : ৮৩)।
তোমাদের কারোর মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে এবং সে ধন-সম্পত্তি ত্যাগ করে যেতে থাকলে পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য প্রচলিত ন্যায়নীতি অনুযায়ী অসিয়ত করে যাওয়াকে তার জন্য ফরজ করা হয়েছে, মুত্তাকিদের জন্য এটা একটা অধিকার। (সূরা বাকারা : ১৮০)।
লোকেরা জিজ্ঞেস করছে, আমরা কী ব্যয় করবো? জবাব দাও, যে অর্থই তোমরা ব্যয় করো না কেন, তা নিজেদের পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য ব্যয় করো। আর যে সৎকাজই তোমরা করবে সে সম্পর্কে আল্লাহ অবগত। (সূরা বাকারা : ২১৫)।
হে মানবজাতি! তোমাদের রবকে ভয় করো। তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে। আর সেই একই ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রী। তারপর তাদের দু’জনার থেকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। সেই আল্লাহকে ভয় করো যার দোহাই দিয়ে তোমরা পরস্পরের কাছ থেকে নিজেদের হক আদায় করে থাকো এবং আত্মীয়তা ও নিকট সম্পর্ক বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকো। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ তোমাদের ওপর কড়া নজর রেখেছেন? (সূরা নিসা : ১)।
ধন-সম্পত্তি ভাগ-বাঁটোয়ারার সময় আত্মীয়-স্বজন, এতিম ও মিসকিনরা এলে তাদেরও ঐ সম্পদ থেকে কিছু দিয়ে দাও এবং তাদের সাথে ভালোভাবে কথা বলো। (সূরা নিসা : ৮)।
সুতরাং আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজন হোক সে দূরের কিংবা কাছের, দেশে-বিদেশে কিংবা গ্রামে; আধুনিক প্রযুক্তির সুযোগে সকলের সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও অর্থনৈতিক জীবনের খোঁজ নিতে হবে। কুরআন শেখানো এবং তাওহীদ-রিসালাত-আখিরাত তথা পূর্ণাঙ্গ দীনের পরিচয় তুলে ধরতে হবে। ইসলামের অনুশাসন মেনে চলার ব্যাপারে তাদের উৎসাহিত করতে হবে। অসচ্ছলদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। আর সচ্ছলদের আমাদের কর্মসংস্থান ও করজে হাসানা ফান্ডে দান করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
৪. প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করা
আর তোমরা সবাই আল্লাহর ইবাদত করো। তাঁর সাথে কাউকে শরিক করো না? বাপ-মার সাথে ভালো ব্যবহার করো? নিকটাত্মীয় ও এতিম-মিসকিনদের সাথে সদ্ব্যবহার করো। আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্বসাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাধীন বাদী ও গোলামদের প্রতি সদয় ব্যবহার করো। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ এমন কোনো ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না, যে আত্মাহংকারী এবং নিজের বড়াই করে। (সূরা নিসা : ৩৬)।
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সা.-কে বলতে শুনেছি, ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়, যে উদর পূর্ণ করে খায় আর তার পাশেই তার প্রতিবেশী অভুক্ত থাকে। (বায়হাকী)।
আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়, আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়, আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কে সেই ব্যক্তি? তিনি বললেন, যার অন্যায় থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না।’ (বুখারী)।
৫. আর্তমানবতার সেবা করা
মানবতার সেবার মধ্য দিয়ে আত্মগঠন ও দাওয়াতী কাজ দুটিই হয়। ইসলামের প্রত্যেকটি কাজ একটি অপরটির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একটি ছাড়া অন্যটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। রমজান মাসে মানবসেবার প্রতি আমাদের আরো তৎপর হতে হবে।
তোমাদের মুখ পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফিরাবার মধ্যে কোনো পুণ্য নেই। বরং সৎকাজ হচ্ছে এই যে, মানুষ আল্লাহ, কিয়ামতের দিন, ফেরেশতা আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব ও নবীদের মনে-প্রাণে মেনে নেবে এবং আল্লাহর প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রাণপ্রিয় ধন-সম্পদ, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও ক্রীতদাসদের মুক্ত করার জন্য ব্যয় করবে? আর সালাত কায়েম করবে এবং জাকাত দান করবে। যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করবে এবং বিপদে-অনটনে ও হক-বাতিলের সংগ্রামে সবর করবে তারাই সৎ ও সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকি। (সূরা বাকারা : ১৭৭)।
আমি কি তাকে দু’টি সুস্পষ্ট পথ দেখাইনি? কিন্তু সে দুর্গম গিরিপথ অতিক্রম করার সাহস করেনি। তুমি কি জানো সেই দুর্গম গিরিপথটি কী? ইহা হচ্ছে দাসত্বমুক্ত করা। দুর্ভিক্ষ দিনে এতিম ও মিসকিনকে খাবার খাওয়ানো। তারপর (এই সঙ্গে) তাদের মধ্যে শামিল হওয়া যারা ঈমান এনেছে এবং যারা পরস্পরকে সবর ও (আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি) রহম করার উপদেশ দিয়েছে। এরাই ডানপন্থী। (সূরা বালাদ : ১০-১৮)।
আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. থেকে বর্ণিত, একদা রাসূল সা.-এর কাছে এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলো, লোকদের মাঝে আল্লাহর কাছে সবচাইতে প্রিয় কে? রাসূল সা. বলেন, লোকদের ভেতর আল্লাহর কাছে সবচাইতে প্রিয় হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে মানুষের বেশি উপকার করে, আর আমলের মধ্যে আল্লাহর কাছে অধিকতর পছন্দনীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, তুমি কোনো মুসলমানের বিপদ-মুসিবত দূর করবে। অথবা তার দেনা পরিশোধ করে দেবে অথবা তার ক্ষুণিœবৃত্তি নিবারণ করে তাকে খুশি করবে। জেনে রেখো, এই মসজিদে এক মাস ইতিকাফ করার চাইতে কোনো ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণের খাতিরে তার সঙ্গে চলা আমার কাছে বেশি প্রিয়। যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ সংবরণ করলো অবশ্য সে চাইলে তা পূর্ণ করতেও পারতো- তার দিলকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন আপন সন্তুষ্টি দ্বারা পূর্ণ করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণার্থে তার সঙ্গে চললো এবং তা পূর্ণ করে দিলো, তার পদযুগলকে সেদিন স্থিরতা দান করবেন, যখন তা থরথর করে কাঁপতে থাকবে (অর্থাৎ কিয়ামতের দিন)। তোমরা মুমিনদের পারস্পরিক সহৃদয়তা, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা এবং পারস্পরিক দুঃখ-কষ্টের অনুভূতিতে এমনি দেখতে পাবে, যেমন একটি দেহ। যদি তার একটি অঙ্গ রোগাক্রান্ত হয়, তবে তার সঙ্গে গোটা দেহ জ্বর ও রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে তাতে অংশগ্রহণ করে থাকে। (বুখারী)।
৬. সর্বসাধারণকে ইসলামের দিকে আহ্বান করা
ইসলামের পথে মানুষকে ডাকার নির্দেশ নবুয়্যতের একদম শুরুতেই এসেছে।
হে চাদরাবৃত! উঠুন, সতর্ক করুন। আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষণা করুন। আপন বস্ত্র পবিত্র করুন এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন। অধিক প্রতিদানের আশায় অন্যকে কিছু দেবেন না। এবং আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে সবর করুন। (সূরা মুদ্দাসসির : ১-৭)।
হে নবী! প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং সদুপদেশ সহকারে তোমার রবের পথের দিকে দাওয়াত দাও এবং লোকদের সাথে বিতর্ক করো সর্বোত্তম পদ্ধতিতে। তোমার রবই বেশি ভালো জানেন, কে তাঁর পথচ্যুত হয়ে আছে এবং কে আছে সঠিক পথে। (সূরা নাহল : ১২৫)।
আমার বান্দাদের বলে দাও, তারা যেন মুখে এমন কথা বলে, যা সর্বোত্তম। আসলে শয়তান মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে? প্রকৃতপক্ষে শয়তান হচ্ছে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (বনী ইসরাঈল : ৫৩)।
৭. সংগঠন করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা
কুরআন-হাদীসের আলোকে জনসাধারণের মাঝে ইসলামী সংগঠন করার যৌক্তিকতা তুুলে ধরতে হবে।
তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক অবশ্যই থাকতে হবে, যারা সৎকর্মশীলতার দিকে আহ্বান জানাবে, ভালো কাজের নির্দেশ দেবে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে। তারাই সফলকাম হবে। (সূরা আলে ইমরান : ১০৪)।
তোমাদের উত্তম জাতি হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমাদের কাজ হলো, তোমরা মানুষকে সৎপথে আহ্বান করবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে। (সূরা আলে-ইমরান : ১১০)।
তোমরা সংঘবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)।
হে মুমিনগণ! আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের দায়িত্বশীলদের আনুগত্য কর। (সূরা নিসা : ৫৯)।
যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে সারিবদ্ধভাবে সুদৃঢ় প্রাচীরের মতো, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। (সূরা আস সফ : ৪)।
আল্লাহই তার রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দীন সহকারে পাঠিয়েছেন, যাতে তিনি একে সকল প্রকার দীনের ওপর বিজয়ী করেন, মুশরিকরা একে যতই অপছন্দ করুক না কেন। (সূরা তাওবা : ৩৩)।
প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং মারে ও মরে? (সূরা তাওবা : ১১১)।
এরা এমন সব লোক, যাদের আমি যদি পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দান করি, তাহলে এরা সালাত কায়েম করবে, জাকাত দেবে, ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং খারাপ কাজে নিষেধ করবে? আর সব বিষয়ের পরিণাম আল্লাহর হাতে? (সূরা হজ : ৪১)।
হারেস আল-আশআরী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, আমি তোমাদের পাঁচটি কাজের নির্দেশ দিচ্ছি, আল্লাহ আমাকে এগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন। ১. জামায়াত বা দলবদ্ধ হবে, ২. নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে, ৩. তার আদেশ মেনে চলবে, ৪. হিজরত করবে অথবা আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে এবং ৫. আল্লাহর পথে জেহাদ করবে। যে ব্যক্তি জামায়াত বা সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেলো, সে যেন নিজের কাঁধ থেকে ইসলামের রশি বা বাঁধন খুলে ফেললো, যতক্ষণ না সে সংগঠনে ফিরে আসবে। আর যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের নিয়মনীতির দিকে লোকদের আহ্বান জানাবে সে জাহান্নামের জ্বালানি হবে, যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করে। (আহমাদ, তিরমিযী)।
৮. ধৈর্য ধরে দাওয়াতী কাজ করা
আল্লাহ জানেন তাদের অন্তরে যা কিছু আছে। তাদের পেছনে লেগো না, তাদের বোঝাও এবং এমন উপদেশ দাও, যা তাদের হৃদয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে যায়। (সূরা নিসা : ৬৩)।
আর উত্তম পদ্ধতিতে ছাড়া আহলে কিতাবের সাথে বিতর্ক করো না, তবে তাদের মধ্যে যারা জালেম তাদের বলো, ‘আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি, যা পাঠানো হয়েছে তার প্রতি এবং তোমাদের প্রতি যা পাঠানো হয়েছিল তার প্রতিও, আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ একজনই এবং আমরা তারই আদেশ পালনকারী’। (আনকাবুত : ৪৬)।
সর্বোপরি ব্যক্তিগঠনের চূড়ান্ত পর্যায় হচ্ছে নিজের জীবনকে বাস্তব সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করা।
আর এভাবেই আমি তোমাদের একটি ‘মধ্যপন্থী’ উম্মতে পরিণত করেছি, যাতে তোমরা দুনিয়াবাসীদের ওপর সাক্ষী হতে পারো এবং রাসূল হতে পারেন তোমাদের ওপর সাক্ষী। প্রথমে যেদিকে মুখ করে তুমি নামাজ পড়তে, যাতে আমরা জানতে পারি কে আমার রাসূলের অনুসরণ করে এবং কে উল্টো দিকে ফিরে যায়, আমি শুধু তা দেখার জন্য কিবলা নির্দিষ্ট করেছিলাম। এটি ছিল অত্যন্ত কঠিন বিষয়, তবে তাদের জন্য মোটেই কঠিন প্রমাণিত হয়নি যারা আল্লাহর হিদায়াত লাভ করেছিল। আল্লাহ তোমাদের এই ঈমানকে কখনো নষ্ট করবেন না। নিশ্চিয়ই আল্লাহ মানুষের জন্য অত্যন্ত স্নেহশীল ও করুণাময়। (সূরা বাকারা : ১৪৩)

Comments

Popular posts from this blog

The virtue of remembrance

উত্তম কথা ব্যতীত অন্য কথা হতে জবানকে হেফাজত করা৷

আরবি শিক্ষা খুব দারুণ একটি বই৷